জীবের শরীর ও কর্ম বিষয়ক প্রশ্নাবলী--

১। জীবের সূক্ষ্ম শরীরটি কি উপাদান দিয়ে তৈরী?
উঃ জীবের সূক্ষ্ম শরীরটি মন, বুদ্ধি ও অহংকার দিয়ে তৈরী।

২। জীবের মৃত্যুর পর তার কি গতি হয়?
উঃ জীবের মৃত্যুর পর দুই প্রকার গতি হয়।
এক-- যে সমস্ত জীর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নিকট আত্মসর্মপণ করে, তারা ভগবদ্ভজনের প্রভাবে সমস্ত জড় কলুষ থেকে মুক্ত হয়ে নিত্য আলয় ভগবদ্ধামে গমন করে। সেখানে তারা দিব্য শরীর প্রাপ্ত হয়ে নিত্যকালের জন্য ভগবানের সেবায় নিযুক্ত হয়।

দুই--যাদের জড়জাগতিক কামনা বাসনা আছে, তারা মৃত্যুর মাধ্যমে ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ ও ব্যোম দিয়ে তৈরী স্থুল শরীরকে পরিত্যাগ করে। কিন্তু মন, বুদ্ধি ও ‍অহংকার নির্মিত সূক্ষ্ম শরীর তাদের পাপ ও পূর্ণ কর্মফল বহন করে। পাপ কর্মের ফলস্বরূপ তারা যমযাতনা ভোগ করে আর পূর্ণ কর্মের ফলস্বরূপ স্বর্গসুখ ভোগ করে থাকে। এই ভোগের পর তাদের নিজ নিজ কর্ম ও চেতনা অনুসারে তারা আর একটি স্থুল জড় শরীর প্রাপ্ত হয়। এভাবে ৮৪ লক্ষ জীব প্রজাতির যে কোন একটি প্রজাতিতে তাদের জন্মগ্রহণ করতে হয়।

৩। #দেহ ও আত্মার পার্থক্য কি?
উঃ জড় বস্তুর দ্বার নির্মিত শরীর সদা পরিবর্তনশীল, নশ্বর, বিনাশশীল, অনিত্য, স্থুল,বহিরঙ্গা জড়া প্রকৃতির সৃষ্টি। জড়দেহ অচেতন, পরিমাপযোগ্য; তাকে কাটা যায়, শুকানো যায়, পোড়ানো যায়, ভেজানো যায়, তা #দুঃখ ক্লেশের আধার স্বরূপ।


আত্মা ‍অপরিবর্তনীয়, অব্যয়, ‍অক্ষয়, অবিনশ্বর নিত্য, #সনাতন, সূক্ষ্ম, অপরিমেয়, ভগবানের অবিচ্ছেদ্য অংশ, চেতন, অনেক, অদাহ্য, অক্লেদ্য, অশোষ্য, সর্বব্যাপ্ত, আনন্দময়।

৪। #জড় পদার্থ ও চিন্ময় বস্তু আত্মার মধ্যে পার্থক্য কি ?
উঃ জড় বস্তু => চিন্ময় আত্মা
ভগবানের বহিরঙ্গা => ভগবানের অন্তরঙ্গা প্রকৃতিজাত।
অচেতন, অজ্ঞান => চেতনাময়, জ্ঞানময়।
বস্তুপিণ্ড মাত্র => চেতন কণা।
জড় ইন্দ্রিয় দ্বারা => জড় ইন্দ্রিয়ের অনুভবযোগ্য অগোচর।
ব্যক্তিত্বহীন => ব্যক্তিত্বের কেন্দ্র, প্রকৃত 'আমি'।

৫। আত্মা শরীরের কোন স্থানে অবস্থান করে?
উঃ আত্মা শরীরের হৃদ্দেশে ‍অবস্থান করে।

৬। দেহে আত্মার অবস্থানের লক্ষণ কি?
উঃ দেহে আত্মার অবস্থানের লক্ষণ হচ্ছে দেহে পরিব্যাপ্ত চেতনা। যে পর্যন্ত একটি দেহে আত্মার উপস্থিতি থাকে, সে পর্যন্ত ঐ জীর দেহে চেতনা প্রকাশিত থাকে। আত্মা-দেহ থেকে নিষ্ক্রান্ত হলে দেহ একটি অচেতন, পচনশীল, জড়পিণ্ডে পরিণত হয়।

৭। জীব কত প্রকারের?
উঃ জীব তিন প্রকারের ১) নিত্যবদ্ধ ২) নিত্যমুক্ত ৩) বন্ধনমুক্ত। ভগবদবিমুখ জীব যারা এই জড় জগতে ত্রিগুণাত্মিকা মায়াশক্তির প্রভাবে বদ্ধ হয়ে আছে ও জড়া প্রকৃতির ত্রিগুণের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে, তাদেরকে নিত্যবদ্ধ জীব বলা হয়। যে সমস্ত জীব ভগবদ্ভজন করে এই বদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত হয়ে চিন্ময় জগতে প্রবেশে উন্মুখ, তাদেরকে বন্ধনমুক্ত জীব বলা হয়।

৮। এই জড় জগতে কত প্রকার জীব প্রজাতি রয়েছে? তাদের বর্ণনা দাও।
উঃ এই জড় জগতে ৮৪ লক্ষ জীব যোনি রয়েছে। এদের মধ্যে কীটপতঙ্গ ১১ লক্ষ, জলচর ৯ লক্ষ, উদ্ভিদ ২০ লক্ষ, পশু ৩০ লক্ষ, পক্ষী ১০ লক্ষ এবং মানুষের মধ্যে রয়েছে ৪ লক্ষ প্রজাতি।

৯। জীবের প্রকৃত সমস্যা বা দুঃখ কি?
উঃ জীবের প্রকৃত সমস্যা বা দুঃখ হচ্ছে-- জন্ম, মৃত্যু, জরা, ব্যাধি।


১০। ত্রিতাপ ক্লেশ কি?
উঃ জড় জগতে অবস্থান কালে জীবাত্মা যে তিন রকম অবশ্যম্ভাবী দুঃখ লাভ করে তাকে বলা হয় ত্রিতাপ ক্লেশ। সেগুলি হচ্ছে--- (১) আধিভৌতিক ক্লেশ (২) আধিদৈবিক ক্লেশ (৩) আধ্যাত্মিক ক্লেশ। জীব তার নিজের মন ও শরীর থেকে যে ক্লেশ প্রাপ্ত হয় তা আধ্যাত্মিক ক্লেশ। যেমনঃ মানসিক কষ্ট এবং রোগ ব্যাধি ইত্যাদি। অন্য জীব থেকে প্রাপ্ত ক্লেশকে আধিভৌতিক ক্লেশ বলা হয়। যেমনঃ সাপের কামড়, মশা-মাছি, চোর-গুণ্ডার উপদ্রব ইত্যাদি। দৈবক্রমে অর্থাৎ দেবতাদের দ্বারা প্রদত্ত যে ক্লেশ, তাকে আধিদৈবিক ক্লেশ বলা হয়। যেমনঃ অনাবৃষ্টি, ঝড়, বন্যা, ভূমিকম্প।


১১। জীব-চেতনা কয় প্রকার ও কি কি?
উঃ পাঁচ প্রকার - (১) আচ্ছাদিত চেতন, (২) সংকুচিত চেতন, (৩) মুকুলিত চেতন, (৪) বিকশিত চেতন, (৫) পূর্ণ বিকশিত চেতন। পাহাড়, বৃক্ষ আদিতে যে চেতনা, তাকে আচ্ছাদিত চেতনা বলা হয়। পশু, পাখিরা হচ্ছে সংকুচিত চেতন জীব। সাধারণ মানুষ হচ্ছে মুকুলচেতন। মানুষের মধ্যে যাঁরা ভগবদ্ভজনে নিযুক্ত হয়েছেন তারা হচ্ছেন বিকশিত চেতন। আর ভগবদ্ভজনে যাঁরা সিদ্ধি লাভ করেছেন তাঁদের চেতনাকে পূর্ণ বিকশিত চেতনা বলা হয়।


১২। পুনর্জন্ম কি?
উঃ জীবাত্মা যে শরীরের মধ্যে অবস্থান করে সেই শরীর কৌমার থেকে যৌবন, যৌবন থেকে বার্ধক্য অবস্থায় ক্রমান্বয়ে পরিবর্তিত হতে থাকে। কিন্তু দেহস্থ আত্মার কোন পরিবর্তন হয় না। ঠিক যেমন পুরানো কাপড় পরিত্যাগ করে নূতন কাপড় পরিধান করা হয়, ঠিক তেমনি জীবাত্মা অব্যবহারযোগ্য জরাজীর্ণ শরীর পরিত্যাগ করে তার কর্ম এবং বাসনা অনুসারে আরেকটি নূতন শরীর গ্রহন করে। আত্মার এই নূতন শরীর ধারণকে বলা হয় পুনর্জন্ম।


১৩। কর্মবন্ধন কি?
উঃ জীব এই জগতে বিভিন্ন প্রকারের জড় কামনা বাসনা নিয়ে কর্ম করে থাকে। কিন্তু সে তার প্রতিটি কৃতকর্মের ফলভোগ করতে বাধ্য থাকে। সেই কর্ম অনুসারে তাকে বারবার জড় শরীর ধারণ করতে হয়। নূতন শরীরে সে নূতন কর্ম করে ও ঐসব কর্মের ফল ভোগের জন্য আবার তাকে জন্ম নিতে হয়। এ রকম চলতেই থাকে। এইরূপ বদ্ধ অবস্থাকে বলা হয় কর্ম বন্ধন।


১৪। জীবের চরম লক্ষ্য কি?
উঃ জীবের চরম লক্ষ্য হচ্ছে - পরমেশ্বর ভগবানের সংগে তার হারানো সম্পর্ককে পুনঃস্থাপন করে শ্রীকৃষ্ণের প্রতি ভক্তিমূলক সেবায় নিযুক্ত হওয়া, কৃষ্ণপ্রেম লাভ করা।


১৫। আনন্দের উৎস কি?
উঃ সর্ব আনন্দের উৎস হচ্ছেন সচ্ছিদানন্দময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। জীব যে নিত্য আনন্দ লাভের আশা করছে, তার জন্য তাঁকে পরম পুরুষ ভগবানের সংগে তাঁর নিত্য, অবিচ্ছেদ্য, প্রেমময়, সম্পর্কের পুনঃস্থাপন করতে হবে।

Comments

Popular posts from this blog

Aim is the key of success